খবর

নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা ২০২৩, ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি

সুদের হার বাড়িয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা ২০২৩ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের জন্য এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক (https://www.bb.org.bd)। মুদ্রানীতিতে রেপো হার বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যাংক ঋণের সুদের হারের সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। ১৮ জুন ২০২৩ তারিখ বেলা ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। সেখানেই তিনি এসব পরিবর্তনের কথা জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর গণমাধ্যমকে জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কর‌তে অর্থ সরবরাহ ক‌মাতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে ঋণের সুদহা‌রের যে ৯ শতাংশ ক্যাপ তু‌লে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। প্রশ্নোত্তর প‌র্বে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, বিশ্বব্যাপী বর্তমানে চার ধরনের লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিক মুদ্রানীতি প্রচলিত আছে। সুদহার, মূল্যস্ফীতি, মুদ্রা সরবরাহ এবং বিনিময় হার টার্গেটিং। বাংলাদেশ ব্যাংক এতদিন ‘মূল্যস্ফীতি টার্গেটিং’ মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে আসছিল। এবার ‘সুদহার টার্গেটিং’ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হ‌য়ে‌ছে। মুদ্রানীতিতে এটা কাঠামোগত পরিবর্তন বলা যায়।

গভর্নর ব‌লেন, নতুন মুদ্রানীতিতে টাকার চা‌হিদা কমা‌তে ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি করা হ‌য়ে‌ছে। ঋণের সুদহা‌রের যে ৯ শতাংশ ক্যাপ ছিল তাও তু‌লে দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। নতুন সুদহার ব্যবস্থা হলো ‘স্মার্ট’ তথা শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ রেট। ১৮২ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদের সঙ্গে আপাতত সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ করিডোর বা সীমা দেওয়া থাকবে। বর্তমানে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ৭ শতাংশের নিচে রয়েছে। এর মানে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ১০ শতাংশের আশপাশে।

নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি হার হিসা‌বে বি‌বে‌চিত রে‌পো সুদহার ৫০ বে‌সিস প‌য়েন্ট বা‌ড়ি‌য়ে ৬ দশ‌মিক ৫০ শতাংশ করা হ‌য়ে‌ছে। অর্থাৎ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থে‌কে ব্যাংকগু‌লো জরু‌রি প্রয়োজনে অর্থ নি‌লে গুণ‌তে হ‌বে অতিরিক্ত সুদ। পাশাপাশি রিভার্স রে‌পো ২৫ বে‌সিস প‌য়েন্ট বা‌ড়ি‌য়ে ৪ শতাংশ ২৫ শতাংশ থে‌কে ৪ দশ‌মিক ৫০ শতাংশ করা হ‌য়ে‌ছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা রাখ‌লে ব্যাংকগু‌লোকে আগের চে‌য়ে বে‌শি সুদ পা‌বে।

 

যে কারণে নতুন মুদ্রানীতি ২০২৩

গণমাধ্যমের সংবাদ ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতি অর্থনীতির প্রত্যাশিত গতি ধরে রাখতে সমর্থ হয়নি। মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু এপ্রিল পর্যন্ত এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ৩০ শতাংশও পেরোয়নি। বিপরীতে দেশের মূল্যস্ফীতির হার লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণে গিয়ে ঠেকেছে। মে মাসে দেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। রিজার্ভ মানি, ব্রড মানির মতো মুদ্রানীতির গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশকগুলো অর্জনের হারও অপ্রত্যাশিত। 

ডলার সংকটের কারণে আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। এ ঋণ প্রাপ্তির অন্যতম শর্ত হলো ব্যাংকঋণের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া। এজন্য একটি করিডোরভিত্তিক সুদহার প্রণয়নের সুপারিশ করেছে আইএমএফ। নতুন মুদ্রানীতিতে আইএমএফের সুপারিশের বাস্তবায়ন ঘটানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের সঙ্গে ৩ শতাংশ করিডোর দেয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার প্রায় ৭ শতাংশ। এর সঙ্গে ৩ শতাংশ করিডোর যুক্ত হল ব্যাংকঋণের সুদহার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। অর্থাৎ ১ জুলাই 2০২৩ তারিখ থেকে ব্যাংক ঋণের সুদের (Bank loan interest) হার ১০ শতাংশের বেশি হবে।

Rate this post

প্রাসঙ্গিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page